
ভারতে মূল্যস্ফীতির পারদ গত জুলাইয়ে টানা ১৫ মাসের শীর্ষে ওঠার পর আগস্টে কিছুটা নেমে এসেছে।
ভারতে মূল্যস্ফীতির পারদ গত জুলাইয়ে টানা ১৫ মাসের শীর্ষে ওঠার পর আগস্টে কিছুটা নেমে এসেছে। মূলত শাকসবজিসহ খাদ্যদ্রব্যের দাম কমায় মূল্যস্ফীতি কমেছে দেশটির। তবে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) ২-৬ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার লক্ষ্যমাত্রা এখনো পূরণ হয়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বর্ষা মৌসুমের অতি বৃষ্টির প্রভাবে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে দেশটির সরকার শাকসবজির দামে ভর্তুকি দিয়েছে এবং কিছু খাদ্যশস্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পাশাপাশি সরকার নিম্নবিত্ত পরিবারে অস্থায়ী ত্রাণ সহায়তাও প্রদান করেছে।
সরকারি এসব পদক্ষেপের ফলে হেডলাইন মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম মূল্যস্ফীতি কমার গতিকে সীমিত করে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ৪-৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রয়টার্সের এ-সংক্রান্ত এক জরিপে ৪৫ জন অর্থনীতিবিদ অংশ নিয়েছিলেন। তাদের পূর্বাভাস, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) বেড়ে দাঁড়াবে ৭ শতাংশে। তবে গত জুলাইয়ের ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ সিপিআই থেকে আগস্টে কমেছে।
মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। রয়টার্সের জরিপে অংশ নেয়া দুই-তৃতীয়াংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ বা তার কিছু বেশি থাকবে।
প্যানথিয়ন ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান উদীয়মান এশিয়াবিষয়ক অর্থনীতিবিদ মিগুয়েল চ্যাংকো বলেন, ‘সবজির সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধি বিশেষ করে টমেটোর দাম বাড়ার ফলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে আসন্ন সিপিআই রিপোর্টে আমাদের প্রত্যাশা মূল্যস্ফীতি কমে আসবে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অংকের ঘরে নেমে আসবে।’ তবে অনিয়মিত বর্ষা মৌসুমের ফলে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রভাবে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি আগামী কয়েক মাসে থাকবে বলে মনে করেন চ্যাংকো।
যদিও এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমপক্ষে অক্টোবর পর্যন্ত আরবিআইর ঊর্ধ্ব লক্ষ্য সীমার ওপরে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমনকি ২০২৫০ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪ শতাংশ মাঝারি ধরনের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যের চেয়েও বেশি থাকবে। অন্যদিকে, আরবিআই শিগগিরই তার নীতি সুদহার বাড়াবে বলে মনে হচ্ছে না। এর পরিবর্তে ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে নীতি সুদহার কমাতে পারে।
পিরামল এন্টারপ্রাইজের প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবোপম চৌধুরী বলেন, ‘অক্টোবরের প্রকাশিত প্রতিবেদনে খাদ্য মূল্যস্ফীতির পদ্ধতিগত পতন সম্পর্কে জানা যাবে। ফলে এখনই আর রোপো সুদহার বাড়াবে না। আমার প্রত্যাশা, আরবিআই অক্টোবরের বৈঠকেও হার অপরিবর্তিত রাখবে।’
রয়টার্সের সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, উৎপাদক মূল্যের পরিবর্তনসহ পাইকারি মূল্যের মূল্যস্ফীতি পূর্ববর্তী মাসে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ পতনের পরে আগস্টেও বার্ষিক পতনের হার ছিল শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ।